বাংলা

গণঅভ্যুত্থানের পর

মুহাম্মদ ইউনূস "বাণিজ্য উন্নয়ন" এর প্রবর্তক বাংলাদেশের জরুরি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হবেন

মুহাম্মদ ইউনূস, একজন অর্থনীতিবিদ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত 'উন্নতশীল ব্যাংকার', বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জরুরি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন।

মহন্মদ ইউনূস বাংলাদেশের ঢাকায় সংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন, ৩রা র্মাচ, ২০২৪, ফটো মহন্মদ হুসেন অপু [AP Photo/Mahmud Hossain Opu]

সোমবার, দীর্ঘকালের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে তুমুল গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ থেকে পালিয়ে যান, যেখানে ১৭ কোটি মানুষের আবাসস্থল।

শিক্ষার্থীরা জুলাইয়ের শুরুতে একটি পশ্চাদপসরণমূলক, বৈষম্যমূলকভাবে সরকারি-চাকরি বরাদ্দ করার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে। সন্ত্রাসবিরোধী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন মোতায়েন সহ নৃশংসভাবে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের প্রতিক্রিয়ায়, শ্রমজীবী ​​জনগণের উল্লেখযোগ্য অংশ এই বিক্ষোভে যোগ দিলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হয়।

রবিবার, আজ পর্যন্ত হিংস্রতার সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিনের পর, শিক্ষার্থীরা হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে তাদের চাপ দিতে পরের দিন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের উদ্দেশ্যে গণমিছিলের ডাক দেয়।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান জাতির কাছে তার পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন খালি করতে এবং দেশ থেকে নিরাপদে যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর প্রস্তাব মেনে নিতে সোমবার মাত্র ৪৫ মিনিট সময় দিয়েছে। এটি হাসিনার বিরুদ্ধে যায়, যিনি গত ১৫ বছর ধরে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কারণ এটি এই উপসংহারে পৌঁছেছিল যে জনপ্রিয় গণ- বিরোধিতাকে দমন করার জন্য তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে এবং এটি অস্থিতিশীল এবং কার্যকরভাবেই পুঁজিবাদী শাসনকে বিপর্যস্ত করছে।

তারপর থেকে, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা রাষ্ট্রপতির সাথে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন—দেশের সংবিধানের অধীনে যা বহুলাংশে আনুষ্ঠানিক ব্যক্তিত্ব—বিরোধী রাজনীতিবিদ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র Students Against Discrimination (SAD) প্রতিনিধিরা , ব্যবসায়ী এবং তথাকথিত সুশীল সমাজ গোষ্ঠীর সাথে।

স্টুডেন্টস অ্যাগেনেস্ট ডিসক্রিমিনেশন (এসএডি), ছাত্র বিক্ষোভের নেতৃত্বদানকারী সম্প্রতি তৈরি সংগঠনের নেতারা, ৮৪ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী ইউনূসকে, যিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমে বসবাস করছেন, তাকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন। 'ডাঃ ইউনূসের উপর আমরা বিশ্বাস করি,' আসিফ মাহমুদ, শীর্ষ SAD নেতাদের একজন মঙ্গলবার একটি ফেসবুক পোস্টে এই ঘোষণা করেছে।

এসএডি নেতারাও প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে তারা সামরিক শীর্ষস্থানীয়দের দ্বারা গঠিত একটি অন্তর্বর্তী সরকারকে মেনে নেবে না, যাদের অভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচারী শাসনের দীর্ঘ, রক্তাক্ত রেকর্ড রয়েছে। তবে অন্যদিকে তারা সামরিক বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করেছে, যা সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে।

মঙ্গলবার, এসএডি কর্মীরা জাতীয় রাজধানী ঢাকায় ট্রাফিক পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর, পুলিশ, বিশেষভাবে প্রতিবাদ আন্দোলনকে রক্তে ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় যারা প্রথম সারিতে থাকা প্রধানের ভূমিকা পালন করেছিল, বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসায় এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন সহ অন্যান্য সরকারী ভবন এবং বিশেষভাবে পরিচিত কয়েকজন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট করলে তাদের অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়। দেশব্যাপী, কয়েক ডজন বা তার বেশি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন বলেছে যে তাদের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত 'ধর্মঘট' করবে।

হাসিনা সরকারের রাষ্ট্রীয় হিংস্রতার ফলে,যার মধ্যে আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের দ্বারা সংগঠিত গুণ্ডা হামলাও রয়েছে, অন্তত ৩০০ জন, যাদের অধিকাংশই ছাত্র এবং অন্যান্য বিক্ষোভকারী, মারা গেছে বলে জানা গেছে।

হাসিনা সরকারের পতনের সময় ইউনূস চলমান অলিম্পিক গেমসের উপদেষ্টা হিসেবে প্যারিসে ছিলেন। বুধবার ফ্রান্স 24-এর সাথে একটি সাক্ষাত্কারে, বাংলাদেশে তার প্রত্যাবর্তন যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ আগে, ইউনূস ছাত্র বিক্ষোভকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং হাসিনার সরকারের পতনকে 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস' ঘোষণা করেন। এটি ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ কে উল্লেখ করে, যখন পাকিস্থান, মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে বাংলাদেশী বিদ্রোহতে আক্রমণের মুখে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন হওয়া আটকানোর ব্যর্থতায় প্রচেষ্টা ছেড়ে দেয়। হাসিনার পিতা ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান রাজনৈতিক নেতা এবং পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে তার হত্যার আগ পর্যন্ত তিনি এর সরকার পরিচালনা করেন।

বুধবার একটি টেলিভিশন ভাষণে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান ফুলের মতো গণতান্ত্রিক বাক্যাংশ তুলে ধরেন। 'আমি নিশ্চিত যে তিনি (ইউনুস) আমাদেরকে একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন এবং আমরা এর থেকে উপকৃত হব,' ঘোষণা করেছিলেন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান সেনাপতি যা পুঁজিবাদী শাসনের ধারক।

SAD নেতাদের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে যারা হাসিনা সরকারের দমন-পীড়নকে অস্বীকার করেছে, তাঁদের মধ্যে ব্যাপক বিশ্বাস রয়েছে যে তাঁর সরকারকে উৎখাত করার সাথে সাথে 'অবাধ নির্বাচন' এবং প্রয়োজনে আরও প্রতিবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশী রাষ্ট্র এবং এর প্রতিষ্ঠানগুলিকে মৌলিকভাবে সংস্কার করা যেতে পারে। ইউনূসের নেতৃত্বে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে সেই দিশায় প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

'আমরা আমাদের উদ্দেশ্যের জন্য যে শহীদরা রক্ত দিয়েছে তাঁদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করব না,' SAD এর সমন্বয়কারী, ২৬ বছর বয়সী নাহিদ ইসলাম ঘোষণা করেন, যিনি গত মাসে পুলিশের দ্বারা নির্মমভাবে নির্যাতনের পর জাতীয়ভাবে পরিচিতি অর্জন করেছেন। “জীবনের নিরাপত্তা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং একটি নতুন রাজনৈতিক দৃশ্যপটের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে আমরা একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ব।”

বাস্তবে, অন্তর্বর্তী সরকার হবে একটি দক্ষিণপন্থী পুঁজিবাদী শাসন, যা দৈত্যকায় আন্তঃমহাদেশীয় পোশাক শিল্প ও অন্যান্য বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং বাংলাদেশী বুর্জোয়াদের কাছে বাধিত থাকবে। এর প্রথম কাজ হবে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা এবং আইএমএফ কর্তৃক দাবিকৃত কঠোরভাবে ব্যয় কমানো ব্যবস্থার বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা।

এটি, এবং যে সরকারই এটি সফল করুক না কেন, নির্বাচিত বা অন্যথায়, সেই বিস্ময়কর সামাজিক বৈষম্য বজায় রাখবে যা সমসাময়িক বাংলাদেশকে চিহ্নিত করে, সঙ্গে সিংহাসনের পিছনে ক্ষমতা থাকবে সামরিক বাহিনীর হাতে।

দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পরিচালনা করার জন্য হাসিনা বিশ্বব্যাংক এবং নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রকাশনাগুলির দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। যদিও এই বৃদ্ধির সুফল প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিনিয়োগকারীদের পকেটে এবং বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠীর, বিশেষ করে আওয়ামী লীগপন্থী কিছু পুঁজিপতিদের একটি স্তরের পকেটে ঢুকেছে। একটি Wealth-X সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ শতাংশের বেশি হিসাবে ৫ মিলিয়ন ডলারের সম্পদের অধিকারী ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে - যেই বৃদ্ধির হার বিশ্বের সর্বোচ্চ। এদিকে, বাংলাদেশী পোশাক শ্রমিকরা বিশ্বের যেকোনো স্থানের চেয়ে সবচেয়ে নির্মমভাবে শোষিত, প্রতি মাসে মাত্র ১০০ ডলারের কিছু বেশি আয় করে।

ইউনূস একজন পুরোপুরি ডানপন্থী ব্যক্তিত্ব। একজন অর্থনীতিবিদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, তিনি দরিদ্রদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী নিপীড়ন এবং পুঁজিবাদী শোষণ দ্বারা সৃষ্ট গণ দারিদ্র্যের সমাধান হিসাবে 'ব্যাবসার উন্নয়ন' কে প্রচার করেন। আর তা হল ক্ষুদ্র ঋণ দ্বারা অর্থায়নকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রচার। তার ধারণাগুলি বৃহত্তর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি দ্বারা কপি করা হয়েছে, যার ফলে সমালোচকরা একে ঋণ দাসত্বের নতুন রূপ বলে অভিহিত করেছেন৷

ইউনূস পশ্চিমে অনেক বেশী মান্য । নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতার পাশাপাশি, তিনি ২০০৯ সালে ওবামা কর্তৃক মার্কিন রাষ্ট্রপতির স্বাধীনতা পদক এবং ২০১০ সালে মার্কিন কংগ্রেসনাল স্বর্ণপদক লাভ করেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা বর্তমান সংকটে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করতে এবং ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে কাজ করার জন্য তাদের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেছেন। নিঃসন্দেহে ওয়াশিংটন আশা করে যে এটি বেজিংয়ের বিরুদ্ধে সর্ব-দিক থেকে সামরিক-কৌশলগত আক্রমণের অংশ হিসাবে, চীন থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখার জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিতে ইউনূসের সাথে তার দীর্ঘস্থায়ী সংযোগগুলিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হবে।

ইউনূস, সামরিক বাহিনী এবং প্রতিক্রিয়াশীল বাংলাদেশী রাষ্ট্র নিয়ে মোহের এমন আধিপত্য বিস্তার ছাত্রদের মধ্যে যা স্ট্যালিনবাদের ক্ষতিকর রাজনৈতিক ভূমিকার সাথে আবদ্ধ। কয়েক দশক ধরে, বিভিন্ন স্তালিনবাদী দলগুলি আওয়ামী লীগ এবং এর চির প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। লাল পতাকা ওড়ালেও, তারা একটি স্বাধীন রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে শ্রমিক শ্রেণীর সংগঠিত হওয়ার পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে গ্রামীণ মেহনতিদের ঐক্যবদ্ধ করার এবং শ্রমিকের হাতে ক্ষমতা ও সমাজতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ের পক্ষে তিক্তভাবে বিদ্বেষী।

নির্মম মজুরি, ব্যাপক কর্মহীনতা এবং রাজনৈতিক দমন-পীড়ন নিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু ইউনিয়নগুলি, স্ট্যালিনবাদী নেতৃত্বে থাকুক বা না থাকুক, ধর্মঘট এবং অন্যান্য শ্রেণী-সংগ্রাম পদ্ধতি ব্যবহার করা, অ্যাকশন কমিটি গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশী পুঁজিবাদকে চ্যালেঞ্জের সূচনায় নিজস্ব স্বার্থ জাহির করা, সবেতেই শ্রমিক শ্রেণীকে গণসরকার বিরোধী আন্দোলনে হস্তক্ষেপ করতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, ।

এদিকে, বিএনপি, আওয়ামী লীগের অসম্মানকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে যাতে করে নিজেকে এবং তার মিত্রদের, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে জামায়াতে ইসলামী, যা একটি ইসলামী সাম্প্রদায়িক দল, যাতে প্রতিশ্রুত নির্বাচনে ক্ষমতায় জয়ী হওয়া যায়।

বুধবার বিএনপি ঢাকা সদর দফতরের বাইরে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে একটি গণসমাবেশ করেছে। সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সোমবার পর্যন্ত, ৭৮ বছর বয়সী অসুস্থ জিয়া ২০১৮ সালে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে গৃহবন্দী ছিলেন। রহমান লন্ডন থেকে কথা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই তিনি সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। রহমান তার বক্তব্যে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করানোর দাবি করেন এবং দাবি করেন যে বিএনপি প্রকৃত গণতন্ত্র দেবে। যাইহোক, প্রায় পরের নিঃশ্বাসেই, তিনি বলেন যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার 'রাজনীতির সাথে জড়িত নয়' এমন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে আইনসভার উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে। যদিও তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি, স্পষ্টতই এই প্রস্তাবের উদ্দেশ্য সংসদ ও সরকারকে জনগণের ইচ্ছা থেকে দূরে রাখা এবং শাসক শ্রেণীকে তার কর্মসূচি চাপিয়ে দেওয়ার জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা প্রদান করা।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হিংস্র হামলা হয়েছে। জবাবে, SAD হিন্দু মন্দির রক্ষার জন্য ছাত্র স্বেচ্ছাসেবকদের সংগঠিত করেছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সহ অন্য সব দল এসব হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

এই ঘোষানাগুলিতে বিশ্বাস করা উচিত নয়। ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশেও দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক ক্ষোভকে সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল লাইনে সরিয়ে দিতে শাসক শ্রেনী সাম্প্রদায়িক হামলাকেই উপায় হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, দারিদ্র্য ও ব্যাপক বেকারত্বের কারণে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের শ্রমিক ও যুবকরা যে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার মুখোমুখী তাদের গণতান্ত্রিক ও সামাজিক প্রয়াস কেবলমাত্র সামাজিক সমতার লড়াইয়ের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হতে পারে তা বুঝতে হবে। পুঁজিবাদী শাসক শ্রেণীর সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধার উপর সম্মুখে আক্রমণ করা এবং আর্থ-সামাজিক জীবনকে পুনর্গঠিত করা, সামাজিক প্রয়োজনের জন্য, ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য নয়, এটিই প্রধান নীতি। এই সংগ্রামকে চালোনার জন্য শ্রমিক শ্রেণীর একটি গণবিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলা প্রয়োজন যার ভিত্তি হবে ট্রটস্কিবাদী কৌশল নিরবছিন্ন বিপ্লব(Permanent Revolution)।

Loading