বাংলা

সাজানো হত্যার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়ার শ্রমিকরা WSWS-এর সাথে কথা বলেছেন

ওয়ার্ল্ড সোশ্যালিস্ট ওয়েব সাইট ২০১৭ সালে ১৩ জন মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া শ্রমিক যারা ২০১৭ সালে সাজানো খুনের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিল তাঁদের মধ্যে দুজনের নিম্নলিখিত অনলাইন সাক্ষাত্কারটি প্রকাশ করতে পেরে গর্বিত।

শ্রমিকরা—যাদের মধ্যে এখন মাত্র ১১ জন বেঁচে আছেন—জাপান-ভিত্তিক আন্তঃমহাদেশীয় গাড়ী প্রস্তুতকারী সংস্থা, সুজুকি, পুলিশ, আদালত এবং হরিয়ানা রাজ্য ও ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা একটি ষড়যন্ত্রের শিকার।

মারুতি সুজুকির ১৩ জন শ্রমিক [Photo: MSWU]

শ্রমিকদের একমাত্র 'অপরাধ' হল বিশ্বব্যাপী সংযুক্ত অটো শিল্পের সাথে বিরাজমান ভারতের এই নৃশংস হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের কাজের পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ করা।

বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক ওয়েব সাইট তাদের এই সাজানো চক্রান্তকে বিশদভাবে উন্মোচিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে এপ্রিল-মে ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি পাঁচ-পর্বের লেখনী, যা ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক শ্রেণীকে সংঘবদ্ধ করার জন্য একটি প্রচারের অংশ হিসাবে মারুতি সুজুকি শ্রমিকদের অবিলম্বে মুক্তি এবং দায়মুক্তির দাবিতে।

এই ১৩ জনের মধ্যে ১২ জন মারুতি সুজুকি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (MSWU) এর পুরো নেতৃত্ব রয়েছে। একটি স্বাধীন ইউনিয়ন, MSWU একটি কোম্পানি-সমর্থিত, রাষ্ট্র-স্বীকৃত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তিক্ত সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে হরিয়ানার মানেসারের মারুতি সুজুকি গাড়ি কারখানার শ্রমিকদের দ্বারা গড়ে উঠেছিল। ২০১১-১২ সালে, মানেসার শ্রমিকরা বারবার জঙ্গী আন্দোলন শুরু করে, যার মধ্যে অবস্থান ধর্মঘটও ছিল।

তাদের এই রক্ষাকারী ভূমিকা শুধুমাত্র ভারতের বৃহত্তম গাড়ী প্রস্তুতকারী পরিচালকদেরই নয়, বরং গুরগাঁও-মানেসার শিল্প তালুক জুড়ে যেটি দেশের মধ্যে দুটি প্রধান গাড়ী প্রস্তুতকারী অঞ্চলের মধ্যে একটি সেখানকার নিয়োগকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল, এবং সামগ্রিকভাবে ভারতীয় শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে, কারণ তারা চুক্তি-শ্রম ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেছে যা শ্রমিকদের বিভক্ত করছে এবং দারিদ্র্য মজুরি এবং নৃশংস কাজের শর্ত আরোপ করতে ব্যবহৃত হয়েছে।

মারুতি সুজুকির ধর্মঘটকারী শ্রমিকরা গাড়ি কারখানার কম্পাউন্ডের ভেতর থেকে স্লোগান দিচ্ছেন যখন তারা ভারতের মানেসারে মারুতি সুজুকি কারখানার বাইরে অনুষ্ঠিত একটি জনসভায় যোগ দিচ্ছেন, বৃহস্পতিবার, অক্টোবর 13, 2011। [AP Photo/Gurinder Osan]

১৮ই জুলাই, ২০১২, শ্রমিকরা এমএসডব্লিউইউ-এর আইনি স্বীকৃতি পাওয়ার প্রায় চার মাস পরে, কোম্পানি উস্কানি দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরী করে। এক ফোরম্যান একজন শ্রমিককে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার চেষ্টা করছিলেন শ্রমিকটি তাকে জাত তুলে গালির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। শ্রমিকরা সেই শ্রমিক জিয়ালাল এর সাময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদ করলে, তাদের উপর কোম্পানির গুন্ডারা হামলা চালায়। পরবর্তী হাতাহাতির সময়, একটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে যার ফলে একজন মানব সম্পদ পরিচালক এর মৃত্যু হয়।

এই দূঃখজনক ঘটনাকে পুঁজি করে কোম্পানি এবং ভারতীয় রাষ্ট্র শ্রমিকদেরকে নির্যাতন করার চক্রান্ত করে। মারুতি সুজুকির দেওয়া তালিকা নিয়ে পুলিশ শত শত শ্রমিককে গ্রেফতার করে। আটক অবস্থায় অনেককে মারধর করা হয়। শেষ পর্যন্ত, ১৫০ জনেরও বেশি শ্রমিকের বিরুদ্ধে গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়, এবং কোম্পানিটি তার মানেসার অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্টের শ্রমিকদের মধ্যে থেকে অতিরিক্ত ২,৩০০ শ্রমিককে সরিয়ে দেয়।

মারুতি সুজুকির ১৩ জন শ্রমিকের বিচার ২০১৭ সালের মার্চ মাসে হয়, যখন শ্রমিকরা ইতিমধ্যেই ভারতীয় কারাগারে প্রায় পাঁচ বছরের বন্দিত্ব সহ্য করেছে। এটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি আইনি প্রতারণা ছিল। বিচারক নির্বিচারে শ্রমিকদের কাছ থেকে পাওয়া সমস্ত সাক্ষ্য বাদ দিয়েছিলেন, যার মধ্যে ১৮ই জুলাই, ২০১২ এর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরাও ছিলেন, এই কারণে যে তারা MSWU-এর প্রতি 'পক্ষপাতদুষ্ট' হবে। প্রমাণগুলি তৈরি করা হয়েছিল এবং সাক্ষীদেরকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছিল। প্রমাণ করার বোঝা শ্রমিকদের উপর চাপানো হয়েছিল, বিচারক ঘোষণা করেছিলেন যে শ্রমিকরা যদি প্রমাণ করতে না পারে যে অন্য কেউ কারখানায় আগুন লাগিয়েছিল, তাহলে এটিই প্রমাণ যে তারা এটি করেছে।

এই চক্রান্তকারী ষড়যন্ত্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে করা হয়. এটি হরিয়ানায় এবং জাতীয় স্তরে ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস পার্টি সরকারের অধীনে শুরু হয়েছিল। সেই সরকার হিন্দু-আধিপত্যবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হওয়ার পরেও এটি নির্লজ্জভাবে অব্যাহত ছিল। বিচারের উপসংহারে, বিশেষ রাষ্ট্রীয় প্রসিকিউটর অনুরাগ হুডা বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা পাঠানোর প্রয়োজনের জন্য শ্রমিকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দাবি করেছিলেন। 'প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি 'মেক ইন ইন্ডিয়া'-এর ডাক দিচ্ছেন,' তিনি জোরের সাথে বলেন, 'কিন্তু এই ধরনের ঘটনা আমাদের ভাবমূর্তিতে দাগ লাগাচ্ছে।

স্তালিনবাদী দলগুলি—ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি—এবং তাদের অনুমোদিত ট্রেড ইউনিয়নগুলি, যথাক্রমে, সেন্টার ফর ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস (সিটু) এবং অল-ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (এআইটিইউসি)- মারুতি সুজুকির এই ১৩ জন শ্রমিকের প্রতিরক্ষায় শ্রমিক শ্রেণীকে একত্রিত করার জন্য কোনও প্রচার চালানোকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা আশঙ্কা করেছিল যে এই ধরনের পদক্ষেপ বৃহৎ ব্যবসায়ী কংগ্রেস পার্টির সাথে তাদের রাজনৈতিক জোট এবং নিয়োগকর্তাদের সাথে তাদের আরামদায়ক সম্পর্ককে ব্যাহত করবে।

জিয়ালাল তাঁর স্ত্রী ও পুত্রের সাথে [Photo: MSWU supplied]

২০২১ সালে, মারুতি সুজুকির এই ১৩ জনের মধ্যে দুজন মারা যায়। জিয়ালাল ৩৫ বছর বয়সে ক্যান্সারে মারা যান। ভারতীয় রাষ্ট্র তার মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী, কারণ জেল কর্তৃপক্ষ তাকে সময়মতো চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয়। একই বছরের শুরুতে, ৩৭ বছর বয়সী পবন দাহিয়া COVID-19 মহামারীতে অস্থায়ীভাবে ছাড় পাওয়া কালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।

গত আড়াই বছরে, বাকি ১১ জন—রাম মেহের, সন্দীপ ধিলো, রাম বিলাস, সরবজিৎ সিং, পবন কুমার, সোহান কুমার, আজমির সিং, সুরেশ কুমার, অমরজিৎ, ধনরাজ বাম্বি এবং প্রদীপ গুজ্জর— বেল পেতে সক্ষম হন, তাদের দোষী সাব্যস্ত আপিল মুলতুবি আছে। সরকার তাদের মুক্তির বিরোধিতা করে। তবে, তাদের আইনজীবীরা, আদালতের সামনে সেই নজিরগুলি উদ্ধৃত করতে সক্ষম হয়েছিলেন যা তাদের সাজা অস্থায়ীভাবে স্থগিত করার জন্য সরবরাহ করেছিল যারা ইতিমধ্যে দীর্ঘ-পূর্ব এবং বিচার-পরবর্তী কারাবাসের সাজা কাটিয়েছে এবং যাদের আপিল 'অদূর ভবিষ্যতে' শোনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে না।

যদিও ১১ জনের সাময়িক মুক্তিকে স্বাগত জানাতে হবে, তবে তাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত উন্মোচন করার এবং তাদের সম্পূর্ণ মুক্তির দাবিতে প্রচার চালিয়ে যেতে হবে।

তারা রয়েছে, তবে এটাতে জোর দেওয়া আবশ্যক, যে গুরুতর হুমকির মধ্যে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের চক্রান্তে এক ইঞ্চিও ছাড় দেয়নি তা যতই অসম্মানজনক এবং গর্তে পরিপূর্ণ হোক না কেন। প্রকৃতপক্ষে, হরিয়ানা রাজ্য প্রথম বিচারের ফলাফলে নিজস্ব আপীল করে, যাতে বেঁচে থাকা ১১ জন মারুতি সুজুকি শ্রমিককে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার জন্য চাপ দেওয়া হয়।

এমএসডব্লিউইউ-এর দুই নেতা মহন এবং বাহাদুর (তাদের আরও প্রতিহিংসামূলক প্রতিশোধ থেকে রক্ষা করার জন্য নাম পরিবর্তন করা হয়েছে) WSWS-এর সাথে কথা বলেছেন। অপরিসীম কষ্ট সত্ত্বেও তারা এখনও যা সহ্য করছেন, তারা ২০১১ সালে যে জঙ্গি সংগ্রাম শুরু করেছিল এবং তাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তার জন্য তারা গর্বিত, তাঁরা লড়াইয়ের মনোভাব বজায় রেখেছেন এবং তাঁরা বিশ্বজুড়ে তাদের শ্রেণী ভাই ও বোনদের সংগ্রামে অবদান রাখতে এবং শিখতে আগ্রহী।

আমরা নীচে তাদের প্রতিক্রিয়াগুলি যা তাঁরা হিন্দি ভাষায় বলেছেন তার থেকে অনুবাদ করেছি।

WSWS: কেন আপনি মনে করেন যে আপনাকে এবং অন্যান্য MSWU নেতাদের মারুতি সুজুকির মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক অবনীশ কুমার দেবের হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল? এই সাজানো ঘটনার জন্য কে দায়ী বলে আপনি মনে করেন? এতে রাষ্ট্র ও রাজ্য সরকারের কী ভূমিকা পালন করেছে বলে আপনি মনে করেন?

মহান: এইচআর ম্যানেজার হত্যার ঘটনায়, এমএসডব্লিউইউ-এর নেতাদের কোম্পানির দ্বারা ফাঁসানো হয়েছিল যাতে তারা শ্রমিকদের ইউনিয়ন ভাঙতে পারে। কোম্পানি এই ষড়যন্ত্রে সফল হয়। কংগ্রেস পার্টির রাজ্য সরকার মারুতি সুজুকি শ্রমিকদের ফাঁদে ফেলতে কোম্পানিকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। সরকার শ্রমিকদের বিরুদ্ধে বড় বড় আইনজীবী নিয়োগ করেছে, যারা বারবার আমাদের মুক্তির বিরোধিতা করে শ্রমিকদের জেল থেকে মুক্তি পেতে দেয়নি।

বাহাদুর: অবনীশ দেবের খুন কীভাবে হল তা এখনও জানা যায়নি। এটি একটি বড় হলে ঘটেছিল আগুনে তিনি শতভাগ পুড়ে যান। ওই হলটিতে এমন কিছু ছিল না যা আগুনের কারণ হতে পারে এবং একজন ব্যক্তিকে ১০০ শতাংশ পুড়িয়ে ফেলতে পারে। কীভাবে পরিচালনাকারী ও প্রশাসনের দ্বারা এই গোটা খুনের খেলা হল? গুরগাঁওয়ে আমাদের ইউনিয়ন খুবই শক্তিশালী ছিল। যার কারণে ম্যানেজমেন্ট এই পুরো খেলা খেলেছে, এর জন্য ম্যানেজমেন্ট সম্পূর্ণভাবে দায়ী। সরকার পুঁজিপতিদের হাতের পুতুল, তাহলে আমরা সরকারের কী করতে পারি? এতে আমদের আশাই বা কী থাকতে পারি?

WSWS: এটা এখন সুপরিচিত যে গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিকদের ২০১২ সালে পুলিশ দ্বারা নির্যাতন করা হয়েছিল। যা ঘটেছে আপনি কি তার বর্ণনা করবেন?

মহান: শ্রমিকদের গ্রেফতার করে পুলিশ নির্যাতন করেছে। শ্রমিকদের লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে ও অন্যভাবে নির্যাতন করা হয়, যা বর্ণনা করাও যায় না।

বাহাদুর: পুলিশ হেফাজতে থাকার সময় আমরা অনেক কষ্ট পেয়েছি। একজন পেশাদার অপরাধীকে তারা যা করে তার চেয়ে অনেক খারাপ ছিল। তারা আমাদের দুই হাত বেঁধে ছাদ থেকে ঝুলিয়ে দেয় এবং আমরা অজ্ঞান হয়ে পরি। উপরন্তু, দুই পুলিশ আমাদের পা ধরে দুই দিক থেকে টানছিল। তারপর তারা আমাদের উপরে ১০০ কেজি ওজনের একটি রড বিছিয়ে দেয় এবং পুলিশ সদস্যরা আমাদের উপরে বসে পরে। এটা খুব, খুব বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা, ভাই।

WSWS: দীর্ঘ কারাবাসের সময় আপনি এবং আপনাদের পরিবার মারুতি সুজুকি শ্রমিক এবং অন্যান্য ইউনিয়নের কাছ থেকে কী সমর্থন পেয়েছেন?

মহান: যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সময় অন্যান্য ইউনিয়ন একত্রে পূর্ণ সহায়তা প্রদান করে, আইনজীবীদের খরচ বহন করে এবং পরিবারের সদস্যদের আর্থিকভাবে সহায়তা করে।

বাহাদুর: দীর্ঘ কারাবাসের সময় আমরা ও আমাদের পরিবার ইউনিয়ন থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি। এই লোকেরা আমাদের পরিবারকে আর্থিকভাবে অনেক সাহায্য করেছে। আমি আমার হৃদয় থেকে এই মানুষদের ধন্যবাদ জানাই।

'সব দেশের শ্রমিকদের একত্রিত হতে হবে এবং বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে তাদের ঐক্য বজায় রাখতে হবে।'

WSWS: আপনি কি জানেন যে CITU বা AITUC কেউই আইনিভাবে সাজাপ্রাপ্ত মারুতি সুজুকি শ্রমিকদের মুক্তির জন্য প্রচার চালায়নি? এই বিষয়ে আপনার কোন বক্তব্য আছে?

মহান: তারা 'যতটা সম্ভব সাহায্য করেছিল' যা তারা বলেছে। আমাদের আস্থায় নেওয়ার পর তারা আমাদের জন্য কিছুই করেনি। যেহেতু আমরা জামিনে আছি, তাই আমি এই ব্যাবস্থাপকদের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিলে আমি বিপন্ন হয়ে পড়ব বলে আমি সীমাবদ্ধ।

বাহাদুর: আমি CITU সম্পর্কে বলতে পারব না, তবে অনেক ট্রেড ইউনিয়ন আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন করেছে এবং আমাদের এবং আমাদের পরিবারকে সহযোগিতা করেছে। আমি ট্রেড ইউনিয়নকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে, বড় বড় ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা তাদের রুটি রক্ষার জন্য কাজ করে এবং তাই হয়। ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ একসঙ্গে কাজ করলে শ্রমিকদের জন্য উপকারী হতে পারে। সেজন্য আমি ট্রেড ইউনিয়নকে অনুরোধ করছি শ্রমিকদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে এবং শ্রমিকদের পাশে থাকার জন্য যাতে শ্রমিকরা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে পারে এবং পরিচালনাকারীদের উপযুক্ত জবাব দিতে পারে।

WSWS: পুঁজিবাদ মারুতি সুজুকির শ্রমিকদের ভোগান্তির মূল কারণ। আমরা বিশ্বাস করি শ্রমিকদের সচেতনভাবে বিশ্বব্যাপী তাদের ভাই-বোনদের সাথে হাত মিলিয়ে সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করা উচিত। ডব্লিউএসডব্লিউএস এবং আইসিএফআই এই ধরনের সংগ্রাম চালাতে ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্স অফ র‌্যাঙ্ক-এন্ড-ফাইল কমিটি (আইডাব্লুএ-আরএফসি) গঠনের জন্য সংগ্রাম শুরু করেছে। এ ব্যাপারে আপনার চিন্তা - ভাবনা কি?

মহান: সারা বিশ্বের শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। WSWS এবং ICFI দ্বারা শুরু হওয়া IWA-RFC উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

বাহাদুর: আমরা ভুক্তভোগীরা ভালো করেই জানি যে, পৃথিবীর সব শ্রমিকই অন্যায়ের সম্মুখীন হয়, তবুও শ্রমিকরা বুঝতে পারে না। আমরা শ্রমিক, কিন্তু আমরা যদি একত্রিত হই, শ্রমিকরা যে কাউকে তদের পাওনা দিতে বাধ্য করতে পারে, তাই আমি ভাইদের একত্রে লড়াই করার জন্য অনুরোধ করছি এবং শ্রমিকদের পক্ষে লড়াই করার জন্য আমি সংগঠনকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।

WSWS: আপনি যে অপরাধ করেননি তার জন্য আপনি ১০ বছর জেলে কাটিয়েছেন। অনুগ্রহ করে কারাগারের অবস্থা বর্ণনা করুন। কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আপনাকে কারাগার থেকে বের হতে দেওয়া হয়েছিল?

মহান: জেলে আমরা অনেক কষ্ট এবং দুঃখের সম্মুখীন হয়েছি। যেকোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হলে প্রথমে আদালত থেকে অনুমতি নিতে হয় এবং তারপরে আমাদের উপস্থিতির অনুমতি দেওয়া হয়।

বাহাদুর: এটা সত্য যে আমরা এমন অপরাধের জন্য ১০ বছর জেলে কাটিয়েছি যা আমরা কখনও করিনি। জেলখানার অবস্থা জাহান্নামে থাকার মতো। কারাগারে খাওয়া-দাওয়া, চান করা ও জামাকাপড় কাঁচা সবতেই নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। জেলে আমাদের প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা খরচ হতো! পরিবার অনেকবারই টাকা দিতে পারেনি। যাইহোক, আমাদের পরিবারগুলি আমাদের বাচ্চাদের সম্পূর্ণ যত্ন নিয়েছে এবং ইউনিয়নও তাদের সম্পূর্ণ দেখভাল করেছে। পরিবার এবং ইউনিয়নের কারণেই আমরা জেলে আমাদের সময় পার করতে পেরেছি।

WSWS: কেন ১০ বছর পর অবশেষে তারা আপনাকে কারাগার থেকে বেড়তে দিয়েছে বলে আপনার মনে হয়?

মহান: তারা এখনও আমাদের বেড়তে দিতে চায়নি; এটা আদালতের রায়, যার অধীনে আমরা জামিন পেয়েছি।

বাহাদুর: জেল থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকার ও আদালতের দেওয়া নিয়ম আমরা মেনেছি। এ কারণে আমরা এখন জেলের বাইরে। আদালতের নিয়ম হলো, সাজার এক-চতুর্থাংশ সাজা হওয়ার পর বন্দি জামিন পান। তাই আজ আমরা জামিনে বেরিয়েছি।

WSWS: আপনার জামিনের অংশ হিসাবে তারা আপনার উপর কোন কোন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে?

মহান: আমাদের জামিনে বেরিয়ে আসার জন্য দুই লাখ টাকা (200,000 টাকা বা প্রায় $2,700) দিতে হয়েছিল বা বন্ধক রাখতে হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা হল আমরা বাইরে কোনো অবৈধ কাজ করতে পারবো না।

বাহাদুর: জামিন পাওয়ার পর আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে যে আমরা কোম্পানির গেটে যেতে পারব না, কোম্পানির সম্পত্তির ভেতরেও হাঁটতে পারব না। আমাদের গুরগাঁওয়ের কোথাও বক্তৃতা দিতেও নিষেধ করা হয়েছে।

WSWS: আপনি কি জীবিকা নির্বাহের জন্য কোন কাজ খুঁজে পেয়েছেন? আপনার পরিবার কিভাবে এর মোকাবেলা করছে?

মহান: আমরা এখন পর্যন্ত আমাদের জীবিকার জন্য কোন কাজ পাইনি। কেউ আমাদের কাজ দেয় না। আমাদের পরিবার খুবই কষ্ট এবং দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে।

বাহাদুর: এখন পর্যন্ত আমরা কোনো স্থায়ী কাজ খুঁজে পাইনি তবে আমরা অবশ্যই আমাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য ছোট ছোট কাজ করছি। আপনি জানেন যে ১০ বছর পরে জেল থেকে বেরিয়ে এসে কাজ পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে। কেউ কেউ অবশ্যই ক্যারিয়ারের জন্য চেষ্টা করছেন। ভালো কাজ করতে হলে বা দোকান খোলার মতো ভালো পরিমাণ টাকা থাকতে হবে। এই মুহূর্তে আমরা তা করতে পারছি না। আমি ভয় পাই যে শাস্তি কখনই বন্ধ হবে না এবং আমাদের বাকি জীবন তা আমাদের সাথেই থাকবে।

WSWS: আপনার কি অন্য কোন ভাবনা আছে যা আপনি অন্য দেশের শ্রমিকদেরকে জানাতে চান?

মহান: বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে সকল দেশের শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং তাদের ঐক্য বজায় রাখা অপরিহার্য।

বাহাদুর: আমি বিশ্বের সকল শ্রমিকদের একটি বার্তা দিতে চাই যে, আমরা যেভাবে “আমরা এক” স্লোগান তুলি, একইভাবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। স্লোগান দিয়ে কোনো লাভ হবে না। যতদিন আমরা জাতপাত, হিন্দু-মুসলিম বিভাজন ত্যাগ না করব, ততদিন আমরা এভাবেই নির্যাতিত থাকব। মানুষ হিসেবে সম্মান পেতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে। আমার পক্ষ থেকে দেশ-বিদেশের সকল শ্রমিককে অভিনন্দন জানাই। আপনাকে, সহকর্মী কমরেডকে, ধন্যবাদ আমাদের মতামত শোনারও মূল্য আছে এটি বিবেচনা করার জন্য। আমরা সকল শ্রমিকদের সাথে আছি এবং ক্রমাগত আমরা তাদের জন্য আওয়াজ তুলতেই থাকবো।

Loading