বাংলা

ভারতের কংগ্রেস পার্টি জনমোহিনী প্রতিশ্রতি দিয়েছে বড় ব্যবসার সাথে সখ্যতা রেখে

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার হিন্দু আধিপত্যবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি যাতে সংবিধানকে বাতিল না করতে পারে তা ঠেকানোর একমাত্র উপায় হিসেবে ইন্ডিয়া ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) জোটে নিজেকে এবং তার মিত্রদের দ্বারা জ্বালাময়ী ভাষণের মাধ্যমে ভারতের একাধিক পর্যায়ের সাধারণ নির্বাচনের ভোটে অবর্তীন; এবং ব্যাপক বেকারত্ব, দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্ এবং ক্রমবর্ধমান সামাজিক বৈষম্যে জনগণের অসন্তোষকে ব্যাপক ভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ভারত এবং এশিয়ার দুই ধনী ধনকুবের, মুকেশ আম্বানি এবং গৌতম আদানির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য মোদি এবং বিজেপিকে বারবার আক্রমণ করেছেন।

মঙ্গলবার, গান্ধী হিন্দু শক্তিধর মোদিকে তার সাম্প্রতিক দাবি 'ঈশ্বর আমাকে একটি উদ্দেশ্যের জন্য পাঠিয়েছেন' এবং প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার কাজ কখন 'সম্পন্ন হবে' তা তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন এই দাবীর জন্য তাকে উপহাস করেন। এই শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনের সপ্তম ও শেষ ধাপের প্রচারের সময় ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে একটি নির্বাচনী সমাবেশে কংগ্রেস পার্টির নেতা বলেন, 'ঈশ্বর আদানিকে সাহায্য করার জন্য মোদিকে পাঠিয়েছেন, দরিদ্রদের জন্য নয়।' .

সব ধাপের ভোটর রায় ৪ই জুন মঙ্গলবার প্রকাশিত হবে।

কংগ্রেস পার্টির নেতা রাহুল গান্ধী, ডানদিকে, এবং তার মা এবং দলের সিনিয়র নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ভারতের নয়া দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচনের ষষ্ঠ রাউন্ডের ভোটদানে ভোট দেওয়ার পর একটি পোলিং বুথ থেকে বেড়িয়ে, শনিবার, 25 মে, 2024। এপি ছবি/মণীশ স্বরূপ] [AP Photo/Manish Swarup]

তার বক্তৃতায়, গান্ধী তীব্র আর্থ-সামাজিক দুরবস্থা ও ব্যাপক ক্ষোভ এবং হতাশাকে পুঁজি করার প্রয়াসে কংগ্রেস পার্টি প্রচারাভিযান জুড়ে বেশ কয়েকটি মূল জনপ্রিয় প্রতিশ্রুতিতে ফিরেছে। এই প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে: কৃষকদের তাদের ফসলের ন্যূনতম কৃষি সহায়ক মূল্যের যে দীর্ঘ দিনের দাবি তা মেনে নেওয়া; ২৫ বছরের কম বয়সী সকল স্নাতকের জন্য শিক্ষানবিশের একটি 'নতুন অধিকার' দেওয়া; বিজেপির শ্রমিক বিরোধী শ্রম 'সংস্কার' আইন পর্যালোচনা এবং সংশোধন করা; বিনামূল্যে জনস্বাস্থ্য সেবা প্রদান; দরিদ্রদের জন্য উপলব্ধ বিনামূল্যে রেশনের পরিমাণ দ্বিগুণ করা; এবং মহাত্মা জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি প্রোগ্রামের অধীনে কাজের জন্য দেওয়া দৈনিক মজুরিকে ২৫ শতাংশের বেশি বাড়িয়ে ৪০০ টাকা (US $4.80) করা।

এ সবই একটি ভন্ড প্রতারণা।

বৃহৎ ব্যবসায়িক কংগ্রেস পার্টি এবং এর ইন্ডিয়া ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) এর অংশীদাররা যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে তারা মোদী এবং তার বিজেপির নেতৃত্বের মতোই “বিনিয়োগপন্থী” সংস্কার ও বেসরকারীকরণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি ডানপন্থী পুঁজিবাদী সরকার গঠন করবে, যা আইনের বাঁধাগুলিকে দূর করবে, এবং ব্যয় বরাদ্দ কমাবে—এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে নয়াদিল্লির চীন-বিরোধী যুদ্ধ জোটকে অব্যাহত রাখবে।

যদিও কংগ্রেসের প্রচারাভিযান ভারতের শ্রমিক ও নিপীড়িতদের অভিযোগের প্রতি নকল সহানুভুতি নিক্ষেপ করেছে, কংগ্রেসের ইশতেহার, ন্যায় পত্র (বিচারের প্রতিশ্রুতি) যাতে বড় ব্যবসার জন্য ধারাবাহিক আনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

এটি ১৯৯১-৯৬ নরসিমহা রাও কংগ্রেস সরকারের অধীনে শ্রমিক-বিরোধী নয়া-উদারবাদী সংস্কারের দরজা খোলার ব্যাপারে কংগ্রেসের ভূমিকার কথা বলে; অত্যধিক নিয়মকানুন এবং 'কুক্ষিগত পুঁজির' দ্বারা ব্যবসায় শ্বাসরোধ করার জন্য মোদি সরকারকে নিন্দা করে; এবং ঘোষণা করে যে কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারের 'সবচেয়ে আশু লক্ষ্য' হবে 'ব্যবসায়ের জন্য একটি সুস্থ, নির্ভীক এবং বিশ্বস্ত পরিবেশ পুনরুদ্ধার করা।' এই ধারা অব্যাহত রেখে, এটি ঘোষণা করে, 'আমরা বর্তমান নিয়ম ও প্রবিধানগুলির একটি ব্যাপক পর্যালোচনা পরিচালনা করব এবং শিল্প, ব্যবসা এবং বাণিজ্যের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করার জন্য সেগুলি বাতিল বা সংশোধন করব।'

চীন বিরোধী আরো দৃঢ় অবস্থান এবং সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে

একটি নীরবতা যা সম্মতির কথা বলে, কংগ্রেসের ইশতেহারে ভারত-মার্কিন বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের কোনো উল্লেখ নেই যার অধীনে ভারতকে পরমাণু অস্ত্রধারী চীনের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের উস্কানিমূলক সামরিক-কৌশলগত আক্রমণের জন্য একটি ফ্রন্টলাইন রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

এটি অবশ্য ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে ধারাবাহিকতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স সরকারই জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের সাথে যোগ দিয়েছিল, কারণ এটি আফগানিস্তান ও ইরাকের বিরুদ্ধে অবৈধ নব্য-ঔপনিবেশিক যুদ্ধ চালাচ্ছিল এবং ভারত-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারিত্ব গঠনের জন্য ইরানকে হুমকি দিচ্ছিল। তারপর থেকে, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার নিকটতম এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় মিত্র জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপক্ষীয় এবং চতুর্ভুজ সামরিক-নিরাপত্তা সম্পর্কের জালে নতুন দিল্লিকে আরও সম্পূর্ণরূপে একীভূত করতে - ভারতীয় জনগণের পিছনে - বিজেপির সাথে যোগসাজশ করেছে।

স্পষ্টতই, তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এবং প্রচারের পথে, গান্ধী এবং অন্যান্য কংগ্রেস পার্টির নেতারা চীনের প্রতি 'নরম' হওয়ার জন্য মোদীকে বারবার আক্রমণ করেছে। এটি এমন পরিস্থিতিতে যেখানে মোদি সরকার গত চার বছর ধরে চীনের সাথে ভারতের বিতর্কিত হিমালয় সীমান্তে কয়েক হাজার সৈন্য, ট্যাঙ্ক এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে এবং তাদের সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে যা সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করতে পারে।

যদিও ভারত এর বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম সামরিক বাজেট রয়েছে, ২০২৩ সালে ৮৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছে, কংগ্রেস পার্টি 'মোট ব্যয়ের অনুপাত হিসাবে প্রতিরক্ষা ব্যয় কম' বলে মন্তব্য করে। অস্ত্র ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি, এটি একটি নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এবং একটি নতুন অপারেশনাল নির্দেশনা চালু করার অঙ্গীকার করছে চীন ও পাকিস্তানের সাথে 'দুটি-দিকে' যুদ্ধের 'চ্যালেঞ্জ' মোকাবেলা করার জন্য।

মোদী এবং বিজেপি কংগ্রেসের এই দাবির জবাব দিয়েছে যে তারা 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' - বেআইনি আন্তঃসীমান্ত আক্রমণ - তাদের সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে নির্দেশ দিয়েছিল – সেই নিয়ে গর্ব করে চীনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক শক্তিকে যুদ্ধের দাড়প্রান্তে নিয়ে এসেছিল ২০১৬ ও ২০১৯ সালে।উভয় ক্ষেত্রেই, কংগ্রেস এবং জাত ভিত্তিক উগ্র বর্ণবাদী এবং স্তালিনবাদী দলগুলি যার সাথে এটি এখন ইন্ডিয়া নির্বাচনী জোটে জোটবদ্ধ তারা বিজেপি সরকারের চারপাশে সমাবেশ করেছে।

ফ্যাসিবাদী বিজেপি এবং তার হিন্দু আধিপত্যবাদী মিত্রদের বিরুদ্ধে কংগ্রেস পার্টি এবং ইন্ডিয়ার দাবি তারা 'গণতান্ত্রিক' এবং ধর্মনিরপেক্ষতাঁর 'প্রাচীর', তারাও 'জনমুখী' ভঙ্গির সাথে কম প্রতারণাপূর্ণ নয়।

যদিও গান্ধী বিজেপির সাম্প্রদায়িক উস্কানির সবচেয়ে নির্লজ্জ উদাহরণগুলির নিন্দা করেছেন, কংগ্রেস পার্টি দীর্ঘদিন ধরেই হিন্দু অধিকারের সাথে মিশেছে। এমনকি কর্পোরেট মিডিয়ার অংশগুলিও এর ভঙ্গিটিকে 'নরম হিন্দুত্ব' হিসাবে বর্ণনা করেছে। এটি জানুয়ারীতে বাবরি মসজিদের জায়গায় একটি রাম মন্দিরের উদ্বোধনের উদযাপনে যোগ দেয়, যেটি ১৯৯২ সালে বিজেপি-আরএসএস ষড়যন্ত্রের ফলে এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রকাশ্য অবজ্ঞার ফলে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এই ব্যাপারে একমাত্র ঝগড়ার বিষয়টি ছিল যে বিজেপি মোদীকে অনুষ্ঠানের কেন্দ্রে রেখে এটিকে একটি 'দলীয়' রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত করেছে।

কংগ্রেসের ইন্ডিয়া জোটের অনেক অংশীদারই পূর্ববর্তী বিজেপির সহযোগী। এর মধ্যে রয়েছে মহারাষ্ট্র-ভিত্তিক শিবসেনার উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শাখা, একটি ফ্যাসিবাদী হিন্দুত্ব-সমর্থক দল যার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত হিংসতা উস্কে দেওয়ার।

কংগ্রেস মোদি সরকারের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঘোষণা করলেও, সরকারে থাকাকালীন তারা প্রায়শই গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে রুক্ষ আচরণ করেছে। এবং যখন এটি একটি ক্ষুদ্র মুষ্টিমেয় ভারতীয় ধনী এবং অতি-ধনীদের এবং প্রতিরাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমোতে যাওয়া কয়েক কোটি মানুষের মধ্যে বিশাল ব্যবধানের সমালোচনা করে, এর 'বিনিয়োগকারী' নীতিগুলিই এর জন্য দায়ী যা এই সামাজিক মেরুকরণ তৈরী করেছে, যা গণতন্ত্রের ভাঙ্গনের মূলে রয়েছে।

কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া’র প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে একটি, যাকে 'সামাজিক ন্যায়বিচার' জন্য একটি ধাক্কা হিসাবে সাজানো হয়েছে, ভারতের সংরক্ষণ (ইতিবাচক পদক্ষেপ) ব্যবস্থা প্রসারিত করা, যার অধীনে কিছু সরকারি চাকরি এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্থানগুলিতে দলিত এবং অন্যান্য ঐতিহাসিকভাবে নিপীড়িত নিম্নবর্ণের জন্য মনোনীত করা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন 'বিভক্ত করা এবং শাসন করা' কৌশলের অংশ হিসাবে এর সূচনা করে, স্বাধীন পুঁজিবাদী ভারতের শাসকগণ ভিন্নমতকে দমন করার জন্য এবং সামাজিক বিরোধিতা দূর করার জন্য দলিতদের মধ্যে একটি বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত পেটি বুর্জোয়া স্তর গড়ে তোলার উপায় হিসাবে এই সংরক্ষণ করেছিলেন, শ্রমিক এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের পুঁজিবাদ বিরোধী শ্রেণী সংগ্রামকে আন্তঃবর্ণ দ্বন্দ্বের পথে চালিত করতে।

সারা বিশ্বের মতো ভারতেও, বুর্জোয়াদের কুখ্যাত ডানপন্থী দল এবং পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকে আঁকড়ে ধরে শ্রমজীবী ​​মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করা যাবে না। বরং, এটি শ্রেণী সংগ্রামের বিকাশের সাথে আবদ্ধ, শ্রমিক শ্রেণীর স্বাধীন রাজনৈতিক সংহতির জন্য সকল মেহনতি এবং গ্রামীণ দরিদ্রদেরকে এর পিছনে জড়ো করতে হবে পুঁজিবাদ এবং শাসক শ্রেণীর সমস্ত রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের বিরোধিতায়।

মোদী এবং তার বিজেপির বিকল্প হিসাবে 'প্রগতিশীল' এবং 'জনগণের সমর্থক' হিসাবে ভঙ্গি করার কংগ্রেসের এই প্রচেষ্টার জন্য যা অপরিহার্য তা হল আবারো স্তালিনবাদী সংসদীয় দলগুলি থেকে - ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) বা সিপিএম এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই)-এবং তাদের অধিভুক্ত ইউনিয়নগুলি থেকে পাওয়া সমর্থন। ভারতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ অংশ হিসাবে, কংগ্রেস এবং তার ইন্ডিয়া জোটের জন্য সিপিএম এবং সিপিআই আকর্শনীয় বামপন্থা- হিসাবে কাজ করে। তারা লাল পতাকা নেড়েছে এবং কাস্তে হাতুরী আঁকা পোস্টার বহন করে অথচ সম্প্রতিকাল পর্যন্ত ভারতীয় বুর্জোয়াদের পছন্দের দল ও জাতীয় সরকারের জন্য ভোট দেবার পক্ষ নেয়।

এতে তারা ভারতের প্রধান মাওবাদী গ্রুপ, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) লিবারেশনের সাথে যোগ দিয়েছে। সিপিআই (এম-এল) আরও একটি ছদ্ম বাম হিসাবে ইন্ডিয়া ব্লকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি ইন্ডিয়ার ব্যানারে বিহারে তিনজন এবং প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডে একজন প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। অন্য সব জায়গায়, পছন্দের কংগ্রেস পার্টি, শিবসেনা এবং পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট-বিরোধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বধীন তৃণমূল কংগ্রেসের পিছনে গ্রামীণ দরিদ্র, শ্রমিক এবং ছাত্রদের জড়ো করার চেষ্টা করছে।

বিশ বছর আগে এই মাসে, ২০০৪ সালের মে মাসে, কংগ্রেস পার্টি এবং তার মিত্ররা, তাদের নিজেদেরকেই বিস্মিত করে, একটি রাজনৈতিক ভূমিকম্পে ক্ষমতায় এসেছিল কারণ ভারতের শ্রমিক ও নিপীড়িতরা ছয় বছরের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের এই দাবিকে জোরের সাথে প্রত্যাখ্যান করেছিল যে ভারত 'উজ্জ্বল' হচ্ছে। সেই সময়ে, কংগ্রেস পার্টি, সিপিএম-নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্টের সমর্থনে উচ্ছ্বসিত, এই দাবি করেছিল যে তারা 'সংস্কার করবে, কিন্তু যার মুখ হবে মানবিক।' অনিবার্যভাবে এই দাবি যে জনসাধারণের স্বার্থ পুঁজির উচ্ছৃঙ্খল মুনাফার প্রয়োজনীয়তার সাথে মিলিত হতে পারে - যে বিনিয়োগকারী সংস্কারের সাথে ভারতের শ্রমিক এবং নিপীড়িতদের জন্য সামাজিক সমর্থন বৃদ্ধি করা যেতে পারে – এটি একটি নিষ্ঠুর প্রতারণা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিল।

একটি রাজতন্ত্রের মত দল কোন রকমে টিকে থাকায় হ্রাস পেয়েছে

২০০৮-৯ বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পরের বছরগুলিতে, ভারতে পুঁজিবাদী বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ায়, কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) সরকারের প্রতি সমর্থন কমে যায়। শ্রমজীবী ​​মানুষ ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং ইউপিএ নেতা এবং বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রকাশ্য লেনদেনের সংযোগের কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছিল। পুঁজিবাদী অভিজাতরা, ইতিমধ্যেই, মোদী-নেতৃত্বাধীন বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে বাজারপন্থী সংস্কারের মাধ্যমে আরও আক্রমনাত্মকভাবে ধাক্কা দেওয়ার এবং বিশ্ব মঞ্চে তাদের মহান-ক্ষমতার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে অনুসরণ করার উপায় হিসাবে।

২০১৪ সাল থেকে, কংগ্রেস পার্টি একের পর এক নির্বাচনী পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে। বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনে, কংগ্রেস ২০ শতাংশেরও কম ভোট পেয়েছে এবং যথাক্রমে ৪৪ এবং ৫২টি আসন দখল করে। এর আগের সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ রেজাল্টটি ছিল - ১৯৯৯ সালে ১১৪টি - যা দ্বিগুণেরও বেশি ছিল।

উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ এবং উড়িষ্যা সহ দেশের বড় অংশে কংগ্রেস নামে মাত্র রয়েছে। বর্তমানে, ভারতের তথাকথিত বৃহৎ পুরানো পার্টি ভারতের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে মাত্র তিনটিতে সরকার পরিচালনা করছে, কর্ণাটক, হিমাচল প্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা।

আরেকটি নির্বাচনী ধাক্কা এড়াতে মরিয়া, কংগ্রেস তার মিত্রদের জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক আসন ছেড়েছে। কংগ্রেস কখনই ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৪০০টির কম আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি, তবুও এই নির্বাচনে তারা মাত্র ৩২৮ জন প্রার্থী দিয়েছে৷

মোদি এবং তার বিজেপি আম্বানি এবং আদানির সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকার রাহুল গান্ধীর অভিযোগের জবাব দিয়েছে কংগ্রেস পার্টির বংশবাদী চরিত্রের দিকে ইঙ্গিত করে। অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে, কংগ্রেস পার্টি একটি বংশপরম্পরা দল হিসেবে কাজ করেছে যার ভাগ্য নেহেরু-গান্ধী পরিবারের থেকে অবিচ্ছেদ্য। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর পুত্র, পৌত্র এবং প্রপৌত্র, রাহুল গান্ধী কংগ্রেস পার্টির প্রধান হিসাবে তার অবস্থানের কাছে ঋণী, যেমন অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক, তার বোন, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বাদ্রা, তাদের পারিবারিক সম্পর্কের জন্য।

নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যগুলি জোরে জোরে ঘোষণা করেছিল যে মোদি এবং তার বিজেপি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসবে। যাইহোক, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে তারা দেখেছে যে মোদী 'তরঙ্গ' জমিতে মিশেছে এবং এর ফল স্বরূপ বিজেপি সাম্প্রদায়িক উস্কানি এবং ধারাবাহিক মিথ্যা প্রচারের সাথে এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

একটি অসম্মানিত, দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেস পার্টি, সম্প্রতিকাল পর্যন্ত দৃশ্যত কোন রকমে বেঁচে থাকা, তা আদো বেঁচে আছে কি না, এবং তার ইন্ডিয়া মিত্ররা জনগণের ক্ষোভকে পুঁজি করতে সক্ষম হবে কিনা তা দেখা বাকি রয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, শ্রমিক শ্রেণী দ্রুত ভারতের পরবর্তী সরকারের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে, কারণ বিশ্ব পুঁজিবাদ, একটি পদ্ধতিগত বৈশ্বিক সংকটে নিমজ্জিত, যা বর্বরতার দিকে ঝুঁকছে।

Loading